প্রতিনিধি ১৪ অক্টোবর ২০২২ , ২:১১:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমানে চোখ ওঠার সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন। ভাইরাসজনিত এ সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে গোলাপি চোখ (পিংক আইজ) বা কনজাংটিভাইটিস বলা হয়।
এ ক্ষেত্রে চোখে চুলকানি, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ব্যথা, লালচে ভাব ও ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। গোলাপি চোখ বা কনজাংটিভাইটিস হলো চোখের স্বচ্ছ ঝিল্লির (কনজাংটিভা) একটি প্রদাহ বা সংক্রমণ। এই ঝিল্লিই চোখের পাতার মাধ্যমে সাদা অংশকে ঢেকে রাখে।
যখন কনজাংটিভায় ছোট রক্তনালিগুলো ফুলে যায়, তখন সেগুলো আরও দৃশ্যমান হয়। এ কারণেই চোখের সাদা অংশ লাল বা গোলাপি দেখায়। গোলাপি চোখ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে দেখা দেয়।
চোখ ওঠার সমস্যা যন্ত্রণাদায়ক হয় ও এটি দৃষ্টিকেও প্রভাবিত করে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই গোলাপি চোখের কারণে কর্নিয়ায় প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা দৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারে।
চোখ ওঠার কারণ কী কী?
>> ভাইরাস
>> ব্যাকটেরিয়া
>> অ্যালার্জি
>> চোখে রাসায়নিকের প্রবেশ
>> চোখে কোনো বস্তু ঢুকলে।
# ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়া কনজাংটিভাইটিস
পিংক আইজের অন্যতম কারণ হলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এটি অ্যাডেনোভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, তবে হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস ও করোনাভাইরাসের কারণেও হতে পারে।
ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস উভয়ই সর্দি বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলোর সাথে প্রকাশ পায়। আবার যারা কন্টাক্ট লেন্স পরেন ও সঠিকভাবে পরিষ্কার না করেন; তাদের ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
উভয় প্রকারই খুব সংক্রামক। এগুলো সংক্রমিত ব্যক্তির চোখ থেকে নিঃসৃত তরলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক বা উভয় চোখই এতে প্রভাবিত হতে পারে।
তবে চোখ ওঠার সমস্যা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চোখের অস্বস্তি কমাতে পারবেন। কারণ চোখ ওঠার সমস্যাটি সংক্রামক হতে পারে, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত এর থেকে মিলবে সুস্থতা।
জীবনে একবারও চোখ ওঠেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। আর পরিবারে কারো চোখ ওঠেছে কিন্তু অন্য কেউ আক্রান্ত হয়নি এমন ঘটনা কম ঘটে। কিন্তু চোখ উঠলে চিন্তার কিছু নেই। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে চোখ ওঠা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশে শীতকালীন আবহাওয়ায় চোখ ওঠার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে চোখ ওঠার পরে অবশ্যই চোখের বাড়তি যত্ন নিতে হয়।
কেন চোখ ওঠে: চোখ উঠলে চোখ লাল হয়ে যায়, কিছুটা ব্যথা ও খচখচ ভাব থাকে। এর সঙ্গে থাকে চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা। চোখ ওঠা হতে পারে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এ ছাড়া ভাইরাস আক্রমণের কারণেও চোখ ওঠার সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ সময়ই ভাইরাসে চোখ ওঠে।
চোখ ওঠে বুঝবেন যেভাবে: অপরিষ্কার বা নোংরা জীবনযাপন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। চোখ ওঠা রোগে চোখ লাল হয়ে যায়। আর এমনটি হয় এই কনজাঙ্কটিভার রক্তনালিগুলো প্রদাহর কারণে ফুলে বড় হয়ে যাওয়া এবং তাতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে। ঘুম থেকে ওঠলে চোখ আঠা আঠা লাগা, সব সময় চোখের ভেতর কিছু একটা পড়েছে এমন অনুভূতি, চোখ চুলকানো এবং জ্বালাপোড়া করা, আলোর দিকে তাকালে অস্বস্তি লাগা, সবকিছু ঘোলা ঘোলা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের কোনায় ময়লা (যা কেতুর নামে প্রচলিত) জমা, চোখ ফুলে যাওয়া চোখ ওঠার লক্ষণ। আসুন জেনে নেই চোখ ওঠলে কি করবেন
নোংরা পানি ্ও পানির ঝাপটা: আক্রান্ত চোখে নোংরা পানি, ধুলাবালি, দূষিত বাতাস যেন চোখে প্রবেশ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া সকালে ওঠার পর চোখে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অনেকে চোখে ওঠলে বারবার পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন বা চোখে পানির ঝাপটা দেন। এটি মোটেই ঠিক নয়।
সানগ্লাসন: আক্রান্ত চোখে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় সানগ্লাস পরতে হবে। এটি রোদে চোখ জ্বলা কমাবে।
চোখ ওঠা ছোঁয়াছে রোগ: চোখ ওঠা ছোঁয়াছে রোগ, তাই যাদের চোখ ওঠেছে, তাদের সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। চোখ আক্রান্ত ব্যক্তির রুমাল, কাপড়চোপড়, তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য হাত তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে হবে। নোংরা হাত চোখে লাগানো যাবে না।
অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ: কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাইরাসের আক্রমণের পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এ জন্য দিনে তিন থেকে চারবার চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে হবে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না হলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য এটি ব্যবহার করা যায়। চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে হবে। এ ক্ষেত্র অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ: দৃষ্টি ঝাপসা হলে, চোখ খুব বেশি লাল হলে, খুব বেশি চুলকালে বা অতিরিক্ত ফুলে গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।